পার্বত্য চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারসহ দেশের সীমান্তবর্তী এলাকা সমূহের নিরাপত্তা বৃদ্ধির দাবি
নিজস্ব প্রতিবেদক
শনিবার রাজধানীর পান্থপথ সেল সেন্টার মিলনায়তনে "সার্বভৌমত্ব সুরক্ষা পরিষদ" এর আয়োজনে পার্বত্য চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারসহ দেশের সীমান্তবর্তী এলাকা সমূহের নিরাপত্তা বৃদ্ধি দাবিতে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সংগঠনের প্রধান সমন্বয়ক মোঃ মোস্তফা আল ইহযায এর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিচারপতি আব্দুস সালাম মামুন, প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মেজর জেনারেল আমছা আমিন (অবঃ), বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাবেক সচিব ড. মোঃ জাকারিয়া, সাবেক রাষ্ট্রদূত মাসুদ মান্নান, লেঃ কর্নেল ফরিদ আকবর (অব), মুখ্য আলোচক হিসাবে উপস্থিত ছিলেন এস জি কিবরিয়া দিপু, এসময় আরও বক্তব্য রাখেন লেখক ও কলামিস্ট শরিফ ওবায়দুল্লাহ,আতাউল্লাহ খান, ব্যারিস্টার মেজর অবঃ সরওয়ার হোসাইন, ড. আলহাজ্ব শরিফ শাকি, কোটা সংস্কার আনন্দের সমন্বয়ক জালাল আহম্মেদ, ছাত্র সমন্বয়ক প্রতিনিধি মুঃ জিয়াউল হক ও সাদমান সায়মন, অধ্যক্ষ আজিজুর রহমান মিন্টু, প্রফেসর এম এ আউয়াল, মোস্তাক ভাসানী, মোঃ সাহিদুল ইসলাম, কবি সাহারা আনোয়ার সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
সীমান্তে শহীদ হওয়া সামরিক ও বেসামরিক শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় এক মিনিট নীরবতা পালনের মধ্যে দিয়ে সভা আরম্ভ হয়।
সভায় বক্তাগণ বলেন, দেশের মধ্যে একটি চক্র বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বসবাস করে দেশ বিরোধী ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে এবং বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পায়তারা করছে। এরা বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বে বিশ্বাস করেনা, তাই দেশ বিরোধী বহিঃশত্রুর সাথে যুক্ত হয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে গোলযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে রাজনৈতিক সুবিধা নেওয়ার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা বেশকিছু দিন লক্ষ্য করছি, আমাদের প্রতিবেশী দেশ ও তাদের মিডিয়াগুলো আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নানাভাবে হস্তক্ষেপ করার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে এবং তাদের সীমান্তবর্তী এলাকা সমূহ নিরাপত্তা জোরদার করছে, এসব কিসের ইঙ্গিত? তা আমাদের রাষ্ট্র ব্যবস্থা কে এখুনি বিবেচনায় হবে।
ইতিমধ্যে আমরা লক্ষ্য করেছি, পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত এলাকার আট জেলার বাংলাদেশ সীমান্তে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে ভারত। বিএসএফের ডিআইজি (জেনারেল) কুলদীপ সিং ভারতীয় গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, সীমান্তে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার লক্ষ্যে থার্মাল ক্যামেরা, নাইট ভিশন ক্যামেরা, সিসিটিভি ক্যামেরা ও ড্রোনের সাহায্যে নজরদারি চালানো হচ্ছে, চেকপোস্টে বসানো হচ্ছে বায়োমেট্রিক লক।
উত্তরবঙ্গের ৮ জেলায় সঙ্গে ১ হাজার ৯৩৭ কিলোমিটার ভারত—বাংলাদেশ সীমান্ত রয়েছে। বাংলাদেশের এই বিশাল সীমান্তবর্তী ভারতীয় এলাকাসমূহে ড্রোনের সাহায্যে নজরদারি বৃদ্ধির আড়ালে ভারত কোনরূপ ষড়যন্ত্র মূলক চক্রান্তে ছক আঁকছে কি—না বাংলাদেশ সরকারকে তা খতিয়ে দেখার আহবান জানান সার্বভৌমত্ব সুরক্ষা পরিষদ নেতৃবৃন্দ।
এসময় বক্তাগণ আরও বলেন, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে চলমান যুদ্ধে দেশটির বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি মংডু শহরসহ রাজ্যের প্রায় সম্পূর্ণ এলাকা নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। এর ফলে বাংলাদেশ—মিয়ানমারের প্রায় পৌনে তিনশো কিলোমিটার সীমানার পুরোটাই এখন আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আরাকান আর্মির মুখপাত্র ইউ খাইং থু খা'র নির্দেশে নাফ নদীর মিয়ানমারের অংশে অনির্দিষ্টকালের জন্য নৌ চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। ওই ঘোষণার পর থেকে নাফ নদীতে নৌ চলাচলে সতর্কতা জারি করেন বিজিবি, বৃদ্ধি করা হয়েছে বিজিবির টহল এবং জনসাধারণকে মাইকিং করে সতর্ক করেন স্থানীয় প্রশাসন কিন্তু এমন প্রস্তুতি প্রয়োজনের তুলনায় অনেক স্বল্প বলে আমরা মনে করছি।
এমন স্বল্প প্রস্তুতির কারণে মিয়ানমার থেকে অবৈধ অনুপ্রবেশ ঘটানো বন্ধ করা সম্ভব হয়নি বলেও মনে করছি। গত ২২ ডিসেম্বর রোববার দুপুরে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মোঃ তৌহিদ হোসেন বলেছিলেন দুর্নীতির কারণে স্থল, জলসীমা সহ সীমান্তের নানা রুট দিয়ে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঘটছে যা আটকানো খুব কঠিন হয়ে পড়েছে।কিন্তু সার্বভৌমত্ব সুরক্ষা পরিষদ মনে করেছে সীমান্তে নিরাপত্তার সল্পতার কারণে অবৈধ অনুপ্রবেশ ঘটছে যা বন্ধ করা সম্ভব হচ্ছেনা এবং অনুপ্রবেশ ঘটা আরও বৃদ্ধি পাবে। কেননা, চলমান যুদ্ধে রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা সহযোগী সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা আর্মি—এআরএ ও আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি বা আরসা সহ কয়েকটি সংগঠনের অবস্থান ছিল জান্তা বাহিনীর পক্ষে যা রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের মুখ্য কারণ হয়ে উঠেছে।
পক্ষান্তরে বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চলের কয়েকটি সন্ত্রাসী সংগঠন রয়েছে আরাকান আর্মির সাথে সম্পৃক্ত। যারা দীর্ঘদিন ধরে পার্বত্য চট্টগ্রামে আলাদা রাষ্ট্র গঠনের পরিকল্পনা করেছে এবং অত্র অঞ্চলে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করে আসছে যা বর্তমান পরিস্থিতিতে পার্বত্য অঞ্চলের মানুষের উদ্বেগের মুখ্য কারণ হয়ে উঠেছে। এমন পরিস্থিতিতে পার্বত্য চট্টগ্রামের সন্ত্রাসী ঘুষ্ঠিগুলো আপাতত শান্ত থাকলেও প্রকৃতপক্ষে তা তুষারে আগুনের মতো চাপা পড়ে আছে এই আগুন যে—কোনো মুহূর্তে প্রতিবেশী ভারত ও মায়ানমারের আরাকান আর্মির সহযোগিতায় দাউ দাউ করে জ্বলে উঠতে পারে, ধ্বংস করে দিতে পারে পার্বত্য চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারসহ সম্পূর্ণ চট্টগ্রাম অঞ্চল।
আমরা গত কিছুদিন যাবৎ লক্ষ্য করছি ভারতীয় মিডিয়াগুলো চট্টগ্রাম নিয়ে বিভিন্নভাবে অপপ্রচার চালিয়ে পার্বত্য অঞ্চলের সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো কে সক্রিয় করে তোলার চেষ্টা চালাচ্ছে। বর্তমানে ভারত ও মায়ানমারের সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠন গুলোর সহযোগিতায় পার্বত্য অঞ্চলের সীমান্ত দিয়ে প্রচুর সংখ্যক অস্ত্র ও গোলাবারুদ ঢুকছে এবং স্থানীয় সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো তা মজুদ করছে বলে বিভিন্ন মহল থেকে খবর পাওয়া যাচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম রক্ষায় অতি দ্রুত সীমান্তবর্তী এলাকা সমূহের নিরাপত্তা বৃদ্ধি ও পার্বত্য চট্টগ্রামের স্বশস্ত্র সন্ত্রাসীদের নজরদারিতে আনতে পার্বত্য অঞ্চল থেকে অস্ত্র উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করতে অত্র অঞ্চলে সেনাবাহিনী বৃদ্ধি ও প্রত্যাহারকৃত সেনা ক্যাম্প সমূহ পুনঃস্থাপন করে অতিদ্রুত অস্ত্র উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করে অত্র অঞ্চলে নিরাপত্তা নিশ্চিত করণের জোর দাবি জানান।
এসময় বক্তাগণ গত বৃহস্পতিবার সিলেটের জৈন্তাপুর সীমান্তে ভারতীয় খাসিয়াদের গুলিতে এক বাংলাদেশি কিশোর নিহত হওয়ার একদিন পর দিন শুক্রবার সবুজ মিয়া নামের ২২ বছরের যুবককে গুলি করে হত্যার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান এবং অনতিবিলম্বে সীমান্ত হত্যা বন্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের আহবান জানান।