পাকিস্তানকে সমর্থন দেওয়া অনেকেই আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কথা বলেন : পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী
নিজস্ব প্রতিবেদক
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম বলেছেন, ১৯৭১ সালে পাকিস্তানকে সমর্থন দেওয়া অনেক রাষ্ট্র বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে কথা বলে। কিন্তু আমরা আজ তাকিয়ে থাকব এই গণহত্যা দিবসে, এই ২৫ মার্চের দিকে, দেখব তারা এ বিষয়ে (গণহত্যা) কী বলছে।
শনিবার (২৫ মার্চ) রাজধানীর আগারগাঁওয়ের মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর মিলনায়তনে ‘বাংলাদেশ গণহত্যা দিবস’ উপলক্ষ্যে আয়োজিত সেমিনারে এসব কথা বলেন প্রতিমন্ত্রী।
শাহরিয়ার আলম বলেন, আমরা জানি বিশ্ব রাজনৈতিক পরিস্থিতি বা যে কারণেই হোক ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানকে অনেক রাষ্ট্রই সমর্থন দিয়েছিল। সেই রাষ্ট্রগুলো এখন পৃথিবীতে গণতন্ত্র এবং আইনের শাসনের প্রতিষ্ঠার জন্য খুব শক্ত জোরালো কথা বলে। তারা অনেক রাষ্ট্রকে তাগাদা দিয়ে থাকে। সেই রাষ্ট্রগুলো আমরা চাইলে বা না চাইলেও বাংলাদেশের অনেক অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে কথা বলে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা আজকে তাকিয়ে থাকব এ গণহত্যা দিবসে, এ ২৫ মার্চের দিকে, এ বিষয় নিয়ে তারা কী বলছেন। বাংলাদেশের পাশে মিয়ানমারের ঘটনাপ্রবাহকে গণহত্যা হিসেবে তারা উপাধি দিয়েছে ইতিমধ্যে। কিন্তু যেখানে ৩০ লাখ মানুষ শহীদ হয়েছিল, যেখানে সেই দেশের সরকারপ্রধান রাষ্ট্রপ্রধান, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, মিলিটারি জেনারেলদের সঙ্গে পাকিস্তানের কথপোকথগুলো লিপিবদ্ধ করা আছে। যেগুলো প্রকাশ্য দিবালোকের মতো সত্য।
তিনি বলেন, সে সত্যকে পাশ কাটিয়ে সমসাময়িক বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠা, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা কোনো কিছুই সম্ভব নয়। যদি না আমাদের ঐতিহাসিক অবস্থানকে স্বীকার করে না নেওয়া হয়।
শাহরিয়ার আলম বলেন, আমি কাউকে বা বিশেষ কোনো রাষ্ট্রকে উদ্দেশ্য করে নয়, কিন্তু এ ঘটনার ৫২ বছর পরে বিষয়গুলোকে স্বীকার করে নিলে কোনো রাষ্ট্র ছোট হবে না খাটো হবে না। বর্তমানে বিশ্বের বিবাধমান একাধিক রাষ্ট্র এক অর্থে বলতে গেলে গণহত্যার পক্ষেই ছিল। কারণ তারা অব্যাহতভাবে পাকিস্তানের মিলিটারিকে অস্ত্রের যোগান দিয়ে গেছে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, পাকিস্তানকে, ইয়াহিয়া খানকে, টিক্কা খানকে; তাদের বর্বরতা থেকে নিভৃত করতে পারেনি তারা। সেই দুঃখ, সেই বেদনা তৎকালীন সময়ের সাড়ে ৭ কোটির মানুষের মধ্যে; যেটা এখন ১৭ কোটির মানুষের মধ্যে ছড়িয়েছে। কোনো আবেগের বশবর্তী হয়ে নয়। বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্র হিসেবে আমরা তাদের প্রতি আহ্বান জানাব, বাংলাদেশের এই গণহত্যাকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ে সামনের দিনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করুন।
অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, আমেরিকা নিজেদের বেলায় এক নীতি আর অন্যদের বেলায় অন্য নীতি নিয়ে চলে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে তাদের নীতি এক রকম। কিন্তু যখন ইরাক ও আফগানিস্তান হয়, তখন অন্য রকম সিদ্ধান্ত হয়ে পড়ে।
এশিয়া জাস্টিস অ্যান্ড রাইটসের কো-ফাউন্ডার ব্যারিস্টার প্যাট্রিক বার্জেস বলেন, অনেকেই এটাকে রাজনৈতিক ইস্যু বানিয়ে ফেলেছে। এতে গণহত্যা হওয়ার যে বিষয়গুলো থাকে তা পূরণ করা যায়নি। তাই স্বীকৃতি লাভে এত সময় পার হয়ে যাচ্ছে। এই গণহত্যার স্বীকৃতি দিতে হবে। যারা এর পেছনে দায়ী, তাদের সাজা দিতে হব। আন্তর্জাতিক আদালতের মাধ্যমে বিচার নিশ্চিত করতে হবে। সত্য উন্মোচন করে তুলে ধরতে হবে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের যৌথ আয়োজিত সেমিনারে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শাহজাহান খান, পররাষ্ট্র-সচিব মাসুদ বিন মোমেন এবং মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক বক্তব্য রাখেন।