ডার্ক মোড
Saturday, 27 April 2024
ePaper   
Logo
দোহারে আবারও চলছে মাটি কাটার মহোৎসব, কৃষি উৎপাদন নিয়ে শঙ্কা

দোহারে আবারও চলছে মাটি কাটার মহোৎসব, কৃষি উৎপাদন নিয়ে শঙ্কা

দোহার (ঢাকা) প্রতিনিধি

ঢাকার দোহার উপজেলা মাহমুদপুর ইউনিয়নে আবারও চলছে কৃষি জমির মাটি কাটার মহোৎসব।এবার কৃষি জমির টপ সয়েল কাটতে প্রভাবশালীরা ব্যবহার করছেন একাধিক আধুনিক এক্সকাভেটর যন্ত্র।এ যন্ত্র কৃষকের আবাদী জমির ফসল বিনষ্ট করছেন ৩ থেকে ৪ বিঘা।পাশাপাশি এমপি মহোদয় সালমান এফ রহমানের নির্বাচনী ওয়াদা পূরনে নির্মান করা এলজিইডি’র পাকা সড়ক ক্ষতিগ্রস্থ করছে।ফলে স্থানীয় কৃষকেরা আশংকায় রয়েছেন এবার উ/পাদিত হওয়া ফসল নিয়ে। অভিযোগ রয়েছে মাটি কাটার সঙ্গে প্রভাবশালীরা জড়িত থাকায় বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যে কেউ কিছু বলছেন না।

শনিবার সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার মাহমুদপুর ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ড মাহমুদপুর গ্রামে এবার কৃষকেরা তাদের আবাদি জমিতে ধান, সরিষা, রসুন,পিয়াজ,ভুট্টা ও সবজি’র উৎপাদন ব্যাপকভাবে হয়ে থাকে।এছাড়াও পদ্মা নদীবেষ্ঠিত হওয়াতে অনেক জমি নদীতে ভাঙ্গে আবার প্রতিবছরই জেগে উঠে অসংখ্য ছোট-বড় চর।

এইসব চরের মাটি কেটে বেশী দামে ইটভাটায় বিক্রি করছে একটি চক্র।এ ঘটনায় স্থানীয়রা সাংবাদিকদের জানালে জাতীয় দৈনিক সমকাল পত্রিকাসহ একাধিক পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়।সংবাদের জের ধরে উপজেলা প্রশাসন অভিযান চালিয়ে একটি আধুনিক এক্সকাভেটর যন্ত্র আটক করলেও পরে জরিমানা করে ছেড়ে দেওয়া হয়।দিন পনের যেতে না যেতেই আবারও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে সেই চক্রটি।এখন সেই জমিতে একাধিক আধুনিক এক্সকাভেটর যন্ত্র ও অর্ধশতাধিক মাহেন্দ্র দিয়ে দিনে ও রাতে শ্রমিক লাগিয়ে মাটি কেটে ইটভাটায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।এ ঘটনায় প্রশাসনের দূর্বল ভ‚মিকা নিয়ে সচেতন মহলে চলছে নানা গুঞ্জন।

অভিযোগ রয়েছে স্থানীয় এক আওয়ামীলীগ নেতার নাম ভাঙ্গিয়ে ওই চক্রটি পদ্মানদী তীরবর্তী বিভিন্ন জেগে উঠা চর থেকে মাটি কাটছে। তবে মাটি কাটার সাথে অভিযুক্ত লিটন দেওয়ান জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করে বলেন,১৫ দিন আগে আমরা কামাল মাস্টারের কাছ থেকে জমির মাটির কিনে নিয়েছি। সে জন্য আমরা তাকে টাকাও দিয়েছি। তার জমিন উঁচুনিচু ছিল সে জন্য আমরা সমান করে দেওয়ার জন্য বেকু দিয়ে কাটিতেছি।তবে পুকুর কিংবা গর্ত করে আমরা মাটি কাটছি না।

তবে অন্যরা কাটছেন বলে জানান তিনি।কারা কাটছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন,আমি বলতে পারবো না।তাছাড়া আপনারা এসেছেন কেন? আপনাদের নামে তো সন্মানী পাঠানো হয়।আপনাদের দোহার প্রেসক্লাবে’র নামেও টাকা পাঠানো হয়। খোঁজ নিয়ে জানেন বলে মোবাইল ফোনের সংযোগটি কেটে দেন।এরপর একাধিকবার তার ফোনে ফোন করেও তার সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যাক্তির সাথে আলাপকালে জানা যায়, দোহার উপজেলার মাহমুদপুর ইউনিয়নের মাহমুদপুর গ্রামে একাধিক আধুনিক এক্সকাভেটর যন্ত্র দিয়ে মাটি কাটছেন লিটন দেওয়ান। তিনি মাহমুদপুর ইউনিয়নে মাইলের পর মাইল প্লাষ্টিকের বড় পাইপ সংযোগ বসিয়ে এবং মাটি কাটার আধুনিক যন্ত্র দিয়ে কৃষি জমির মাটি কেটে উজাড় করা হচ্ছে। এসকল এক্সকাভেটর মেশিন দিয়ে জমির টপ সয়েল ও ড্রেজিংয়ের কাটার মেশিনের মাধ্যমে ফসলি জমিগুলোকে ১০ থেকে ২০ ফুট গভীর গর্ত করা হচ্ছে। এতে আশ-পাশের ফসলী জমি ভেঙ্গে তৈরি হচ্ছে জলাশয় ও পুকুর। এভাবে মাটি কাটা ও বিক্রি বন্ধ না হলে ফসল উৎপাদন আশঙ্কাজনক হারে হ্রাস পেতে পারে।

মাহমুদপুর ইউনিয়নের ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক মো: মীর আলী অভিযোগ করে বলেন, আমাদের এই চক থেকে একটানা বেশ কয়েক দিন যাব/ মাটি কাটা হচ্ছে।ফলে আমার জমির পাশেও এক্সকাভেটর মেশিন দিয়ে কয়েক লক্ষ ফুট মাটি কেটে ইটভাটায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে।এতে আমার আবাদি জমির মৌসুমি ধান গাছ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।ইচ্ছা না থাকলেও পরিস্থিতির শিকার হয়ে ভাবছি আমি আর চাষাবাদ করবো না।আমার জমির মাটিও বিক্রি করে দিবো। এককালিন টাকা পাওয়া যাবে।

বাস্তা গ্রামের হাশেম ফকির বলেন ১৫ দিন আগে মাটি কাটা ও বিক্রির অভিযোগে প্রশাসন অভিযান চালিয়ে একটি বেকু জব্দ করার পর কিছু দিন বন্ধ ছিল।পরে জানতে পারলাম প্রভাবশালীরা নামমাত্র জরিমানা দিয়ে মুচলেকায় বেকু মেশিনটি ছাড়িয়ে নেয়। এখন তারাই আবার সব কিছু ম্যানেজ করে চালু করেছে। আশেপাশের জমিগুলো থেকে মাটি কাটার কারনে সৃষ্ট গর্তে অন্যদের জমি পড়ে যাওয়ায় এখানকার কৃষকরা নাম মাত্র টাকায় জমি বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে।

বড় ইকরাশি গ্রামের শেখ সোহেল রানা বলেন, বিশাল এ উপজেলায় দেদারসে চলছে ড্রেজার, ভেকু ও মাটিবাহী ট্রাক্টর। আর এতে আমাদের বাসার সামনে থাকা রাস্তায় মাটি পরে ধুলোয় পরিনত হচ্ছে সেই সাথে বৃষ্টি হলেতো কথাই নাই পুর পাকা রাস্তা কাঁদায় পরিনত হয়েছে। আর এর ম‚ল কারণ হচ্ছে পাশে থাকা একাধিক ইট ভাটা।পরিবেশের জন্য ক্ষতিকারক এই ইটভাটা যদি না থাকে তাহলে আর এই সমস্যায় আমাদের পড়তে হয় না। এ বিষয়ে দোহার উপজেলা সহকারি কমিশনার(ভুমি) এস এম মুস্তাফিজুর রহমান জানান,অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে দোহার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ মোবাশ্বের আলম বলেন,কৃষি জমির মাটি কাটা সম্পূর্ন্ন নিষেধ।এধরনের কাজে কেউ জড়িত থাকলে এবং প্রমান পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মন্তব্য / থেকে প্রত্যুত্তর দিন