
ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে নির্বিচারে গুলি, ৩২ ফিলিস্তিনি নিহত
বিশ্বসংবাদ ডেস্ক
গাজায় ত্রাণ নিতে যাওয়া ফিলিস্তিনিদের ওপর আবারও নির্বিচারে গুলি চালিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। এতে ৩২ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, আহত আরও অনেকে। যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েল সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রগুলো থেকে খাবার নিতে গেলে এ হামলা চালানো হয় বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
স্থানীয় সময় শনিবার (১৯ জুলাই) দক্ষিণ গাজায় জিএইচএফের ত্রাণকেন্দ্রগুলোতে এ হামলার ঘটনা ঘটে।
এ বিষয়ে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর বক্তব্য, দক্ষিণ গাজার রাফা শহরের কাছে ত্রাণ কেন্দ্রগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর সন্দেহভাজন কয়েক ব্যক্তি তাদের (সেনা) দিকে অগ্রসর হলে, দূরত্ব বজায় রাখার জন্য বলা হয়। কিন্তু তারা সেনাদের কথা না শুনলে সতর্কতামূলক গুলি ছোঁড়া হয়।
জিএইচএফ জানিয়েছে, তাদের ত্রাণকেন্দ্রগুলোতে কিংবা আশেপাশে এমন কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। সংস্থাটির ভাষ্যে, আমরা বারবার ত্রাণ নিতে আসা মানুষদের সতর্ক করেছি যে তারা যেন রাতে কিংবা ভোরে এখানে না আসে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছে ভিন্ন কথা
শনিবারের হামলায় সবচেয়ে বেশি মৃত্যু ঘটেছে দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসে অবস্থিত জিএইচএফের একটি ত্রাণকেন্দ্রের ৩ কিলোমিটারের মধ্যে।
মাহমুদ মোকেইমার নামে এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, তিনিসহ আরও কয়েকজন তরুণ ত্রাণকেন্দ্রের দিকে যাচ্ছিলেন। তখন ইসরায়েলি সেনারা প্রথমে সতর্কতামূলক গুলি ছোঁড়ে, এরপর সরাসরি তাদের ওপর গুলি চালানো হয়।
তিনি বলেন, ‘সেনারা আমাদের ওপর নির্বিচিারে গুলি চালিয়েছে। নিজের চোখের সামনেই তিনজনকে নিহত হতে দেখেছি আমি। অনেকে দৌঁড়ে পালিয়ে কোনোমতে প্রাণ বাঁচিয়েছে।’
আকরাম আখের নামে আরেক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, ভোর আনুমানিক ৫টা থেকে সকাল ৬টার মধ্যে এসব হামলা চালানো হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘ইসরায়েলি সেনারা চারপাশ থেকে ঘিরে ফেলে সরাসরি আমাদের ওপর গুলি চালায়।’ এত বহু হতাহতের ঘটনা ঘটেছে বলে জানান আকরাম।
সানা আল-জাবেরি নামে এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, ত্রাণকেন্দ্র খোলার পরও হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েলি সেনারা।
ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘এটা কি আসলে খাবার দেওয়া হচ্ছে নাকি মৃত্যু? তারা আমাদের সঙ্গে কোনো কথা বলে না, শুধু গুলি চালায়।’
বেড়েই চলেই লাশের সংখ্যা
এই হামলার পর ২৫টি লাশ পাওয়ার কথা জানিয়েছে খান ইউনিসের নাসের হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তাছাড়া, রাফায় অবস্থিত জিএইচএফের আরেকটি ত্রাণকেন্দ্রের ১০০ মিটারের মধ্যে এক নারীসহ ৭ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
নাসের হাসপাতালের নার্সিং ডিপার্টমেন্টের প্রধান ডা. মোহামেদ শাকের বলেছেন, ওই হাসপাতালে প্রায় ৭০ জন আহত রোগী এসেছেন, তাদের বেশিরভাগ মাথায় ও বুকে গুলি লেগেছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জরুরি বিভাগের প্রধান ফারেস আওয়াদ জানান, গাজা শহরের একটি তাঁবুতে ইসরায়েলের চালানো বিমান হামলায় দুইজন নিহত হয়েছেন। অন্যদিকে, মধ্য গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় নবজাতক ও নারীসহ ১২ জন নিহত হয়েছেন। বুরেঝিতে নিহত হয়েছেন আরও দুই ফিলিস্তিনি এবং মধ্য গাজায় রাস্তায় প্রাণ গেছে এক শিশুর।
এসব মৃত্যুর বিষয়ে বা নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে হামলার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। তবে শনিবার দিনভর অন্তত ৯০টি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে তারা।
এদিকে, ২১ মাসের এই হামলায় ৫৮ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। তাছাড়া, গাজায় খাদ্য সংকট নিয়ে বারবার সতর্ক করে যাচ্ছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো।
টানা অবরোধের পর মে মাস থেকে সীমিত পরিসরে ত্রাণ দেওয়া শুরু করে জিএইচএফ। এ সংস্থাটির অধীনে পরিচালিত ত্রাণকেন্দ্র থেকে খাবার আনতে গিয়ে এরই মধ্যে আট শতাধিক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তর থেকে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এই ভয়াবহ তথ্য উঠে এসেছে।