ডার্ক মোড
Friday, 19 April 2024
ePaper   
Logo

জৈন্তাপুরে টিলা কেটে অবৈধ পাথর উত্তোলন,পরিবেশ বিপর্যয় রোধে ব্যবস্থা নিচ্ছেনা প্রশাসন

জৈন্তাপুর (সিলেট) প্রতিনিধি

পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা হিসেবে সর্বোচ্চ আদালতের আদেশ অমান্য করে দীর্ঘদিন ধরে সিলেটের-জৈন্তাপুর উপজেলার শ্রীপুর,আলুবাগান,মোকামপুঞ্জি এলাকা থেকে পাথর উত্তোলনের অভিযোগ রয়েছে প্রভাবশালীচক্রের বিরুদ্ধে।সরেজমিন পরিদর্শন করতে গিয়ে দেখা যায়, কৌশল বদল করে পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা থেকে টিলা কেটে অবৈধ পাথর উত্তোলনে মরিয়া হয়ে উঠেছে চিহ্নিত একটি চক্র।

প্রভাবশালী চক্রের সদস্যরা টিলা কেটে অবৈধ পাথর উত্তোলন করছে এমন চিত্র সংগ্রহের সময় তাদের বাধার মূখে পরেন গণ-মাধ্যমকর্মীরা এর পর অবৈধ পাথর উত্তোলনকারী চক্রের সদস্যরা বিভিন্ন স্থানে মোবাইলে ফোনে যোগাযোগ করে গণ-মাধ্যমকর্মীদের মেনেজ করার চেষ্টা চালায়,সংবাদকর্মীদের মেনেজ করতে ব্যার্থ হয়ে অবৈধ পাথর উত্তোলনের সংবাদ প্রচার না করার জন্য আদিবাসী নেতা হেনরি লামিন’র ক্ষমতার জানান দেয়।

এ অপতৎপরতা রোধে প্রশাসন সতর্ক অবস্থানে থাকার কথা থাকলেও প্রশাসনের নিরব ভুমিকায় জনমনে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হচ্ছে।বাস্তব বেআইনি হলেও প্রভাবশালী ও দুর্নীতিগ্রস্থ কিছু মানুষ প্রশাসনের নাকের ডগায় পান-সুপারির বাগান ধ্বংশ করে আলু বাগান সংলগ্ন মোকামপুঞ্জি এলাকায় টিলা কেটে পাথর উত্তোলনের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।

অভিযোগ রয়েছে অবৈধ পাথর উত্তোলনের টাকা বাট-বাটুয়ারের অংশ চলে যায় একটি স্বার্থনেষী মহলের পকেটে। যে কারণে ওই সব স্বার্থনেষী ব্যাক্তিরা প্রশাসনকে মেনেজ করে অবৈধ পাথর উত্তোলনে সহয়তা করছে এমন অভিযোগও শোনা যাচ্ছে।

এ কারণেই পরিবেশগত বিপর্যয় সৃষ্টি হলেও প্রশাসন ও পুলিশ নীরব ভূমিকা পালন করে আসছে।বিশ্লেষকরা মনে করেন,অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন বন্ধ না হওয়ার কারণ,পাথর উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে লোক দেখানো অভিযান পরিচালনা অভিযানের পরপর আবারও শুরু হয় পাথর উত্তোলন,এসব অভিযান পরিচালনার আগেই পাথর উত্তোলনকারীদের কাছে আগাম খবর চলে যায়। এতে সহজেই অপরাধীরা গা’ডাকা দেয়।সচেতন মহলের প্রশ্ন, অভিযান পরিচালনার আগেই যদি অপরাধীরা খবর পেয়ে যায়, তাহলে সেই অভিযানের অর্থ কী? তাহলে কি শর্ষের ভেতরেই রয়েছে ভূত?

এই ভূত তাড়াতে কর্তৃপক্ষকে কঠোর অবস্থান নিতে হবে।স্থানীয়দের অভিযোগ,অবৈধ পাথর উত্তোলনের কাজ নির্বিঘগ্ন করতে প্রচুর পরিমান অর্থের লেনদেন হয়। অবৈধ পাথর উত্তোলনে অথর্ লেনদেন হয় কি না জানতে চাইলে, জৈন্তাপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) রিপামনী দেবী মোবাইল ফোনে বিষয়টি সত্য নয় বলে দাবি করেন।তবে অবৈধ পাথর উত্তোলনের বিষয়টি শিকার করে নিয়মিত টাস্কর্ফোর্সের অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির তথ্য মতে,২০০৫ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত সিলেটের জাফলং,শ্রীপুর,ভোলাগঞ্জ,লোভাছড়াসহ বেশ কয়েকটি পাথর কোয়ারীতে পাথর উত্তোলনের সময় টিলার পাড় ধসে বালু চাপায় ১০৬ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে।

এর মধ্যে তাদের কয়েক জনের লাশ গুম করার ঘটনার পর দুটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। এই কমিটি পরিবেশ ধ্বংস,রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুট এবং শ্রমিক হত্যার জন্য দায়ী ব্যবসায়ীদের দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার সুপারিশ করলেও আজ পর্যন্ত তা বাস্তবায়িত হয়েছে বলে জানা যায়নি।

২০০৮ সালে সিলেটের উন্নয়নে ১২টি প্যাকেজ প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছিল, যেসব প্রকল্পের উদ্দেশ্য ছিল এ অঞ্চলের পর্যটন স্থান গুলোর উন্নয়ন ও উৎকর্ষ বৃদ্ধি।গৃহীত প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হলে সুষম উন্নয়নের ধারণাটি যেমন বাস্তব ভিত্তি পেত, তেমনি এর ইতিবাচক প্রভাব স্থানীয় পর্যায়ে দৃশ্যমান হওয়ার পাশাপাশি তা অবৈধ পাথর উত্তোলন বন্ধেও ভূমিকা রাখত।

কিন্তু প্রকল্প গুলো এখনও বাস্তবায়িত হয়নি। প্রকৃতি ও পরিবেশের ওপর বেআইনি খবরদারি কখনও সুফল বয়ে আনে না এমন মন্তব্য সচেতন মহলের।অবৈধ পাথর উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে আদৌ কি কোন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে? জানতে চাইলে সিলেট পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক মো.ইমরান হোসাইন,মোবাইল ফোনে প্রতিবেদক-কে বলেন,ইতোপূর্বে জৈন্তাপুরের শ্রীপুর,আলু বাগান,মোকামপুঞ্জি এলাকায় পরিবেশ অধিদপ্তর কর্তৃক টাস্কর্ফোসের অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। বিগত সময়ে আলু বাগান এলাকার খাসিয়া আদিবাসী নেতা হেনরি-লামিন’র ম্যানেজার বকুল ও তার সাঙ্গপাঙ্গুরা টিলা কেটে পাথর উত্তোলনে অভিযুক্ত থাকায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।

অভিযুক্তরা বর্তমানে জামিনে রয়েছে। আমাদের তদন্ত কর্মকর্তা মামলাটি তদন্ত করছে,তদন্ত শেষে আদালতে চার্জসীট-প্রতিবেদন জমা দিবে তদন্ত কর্মকর্তা।

শোনেছি অভিযুক্তরা জামিনে এসে আবারও টিলা কেটে পাথর উত্তোলনের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। পুনরায় ওই এলাকায় নতুন করে অনেকেই নাকি টিলা কেটে পাথর উত্তোলন করছে। অবৈধ পাথর উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

জাফলং ও শ্রীপুরের পাথর কোয়ারী এবং মোকামপুঞ্জির টিলা কেটে পাথর উত্তোলন শুধু পরিবেশের বিপর্যয়ই ঘটাচ্ছে না,যে কোন সময় কেড়ে নিতে পারে অনেকের প্রাণ। এই অনাচার থেকে মুক্ত হতে পরিবেশ অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন সচেতন মহল।

মন্তব্য / থেকে প্রত্যুত্তর দিন