ডার্ক মোড
Friday, 19 April 2024
ePaper   
Logo
গ্রিন জোন মাঠ তীব্র সংকট সরকারি জায়গা বেদখল

গ্রিন জোন মাঠ তীব্র সংকট সরকারি জায়গা বেদখল

মোসলেহ উদ্দীন সা'দী

ঢাকা মিরপুর কালশী রোড সংযুক্ত ডিওএইচএস ও কুড়িল বিশ্বরোড, এয়ারপোর্ট এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, পূরবী মেট্রোরেলপথসহ আরও কয়েকটি পথ নিয়ে, ৫ নং ওয়ার্ড সংযুক্ত হয়েছে। এর আয়তন ১.৩৪ কি.মি। গুরুত্বপূর্ণ সংযোগস্থল ৫ নং ওয়ার্ড।
এ ওয়ার্ডটি অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা খোলা জায়গা নেই বললেই চলে। সরকারি মাঠের জায়গা, রাস্তার জায়গা হয়ে আছে বেদখল ।

ঢাকা উত্তরে ৫৪ এবং দক্ষিণে ৭৫ দুই সিটির মোট ১২৯ ওয়ার্ডের ৪১ওয়ার্ডে নেই কোন মাঠ। এতে যেমন চরম দুর্ভোগ এসব এলাকার বাসিন্দাদের তেমনি এই ৫ নং ওয়ার্ডের দুর্ভোগ আরও তীব্র। কারণ, এখখঅনে বসবাসরতদের অধিকাংশই বিহারী এবং গার্মেন্টস কর্মী।

এই ওয়ার্ডে ঢাকা সাংবাদিক আবাসিক এলাকা, ২২ তলা স্ট্যান্ডার্ড গার্মেন্টস, কালশী কবরস্থান, পল্লবী কলেজ, অনেকগুলো স্কুলসহ কয়েকটি আবাসিক এলাকা ও ১০টি উর্দুভাষী বিহারী ক্যাম্প আছে।

ঢাকা-১৬ নির্বাচনী এলাকায় সেকশন-১১ এ, বি, সি, ডি, ই, এফ ও পলাশনগর নিয়ে, জনবসিত নিয়ে ৫ নং ওয়ার্ড গঠিত।

১২৯ টি ওয়ার্ড মিলে, আধুনিক পরিচ্ছন্ন ঢাকা মহানগরী করবার ঘোষণায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ঢাকার দুই মেয়র।
ঢাকা উত্তরে আতিকুল ইসলাম এবং ঢাকা দক্ষিণে শেখ ফজলে নুর তাপস।
উত্তরসিটি কর্পোরেশন এর ৫ নং ওয়ার্ডটি বিভিন্ন কারণে, যত গুরুত্বপূর্ণ স্থান সেই হিসেবে এর সৌন্দর্য ও উন্নয়ন এলাকাবাসী আরও বেশি আশা করে।

এই ওয়ার্ডের সাত ব্লকে, এক টুকরো করে, সবুজ চত্বর, খেলার মাঠ দরকার। দুর্যোগকালীন সময়ে, সামাজিক অনুষ্ঠানে, ধর্মীয় উৎসব পালনে, লোকজন একত্রিত হয়। তখন খোলা মাঠের প্রয়োজন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, একজন জানান ১৯৯০ সালের দিকে অত্র এলাকায় বহু খালি জায়গা ছিল যেখানে আমাদের ছেলে মেয়েরা একসময় খেলাধুলা করত। কিন্তু পরবর্তীতে উক্ত খালি জায়গাগুলো প্রভাবশালীরা পর্যায়ক্রমে দখল করে নেয়।

বাউনিয়াবাঁধে দু'টি পুকুর ছিল। আমরা গোসল করতাম। মাছ ধরতাম। দুর্ভাগ্য, সেসব এখন দখলকৃত। টিনশেড কলোনী, বস্তি আর ময়লার ভাগাড়। "
সিনিয়র সাংবাদিকদের দাবি সাংবাদিক আবাসিকের পশ্চিমে ৯ নং রোড সংলগ্ন প্রায় ২.৫০বিঘা জমি দখল মুক্ত করে, গ্রিন জোন ও শিশুদের খেলার মাঠের জন্য

কিন্তু একটি প্রভাবশালী মহল, উক্ত জায়গা বরাদ্দ নেয়ার চেষ্টা করছে প্লট ও ফ্ল্যাট বাণিজ্য করার উদ্দেশ্যে।

৫ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর জনাব আব্দুর রউফ নান্নু এবং সংরক্ষিত ২,৩ ও ৫ নং ওয়ার্ডের মহিলা কাউন্সিলর জনাবা বেগম মেহুরুন্নেসা হক। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি হিসেবে, তারা দীর্ঘ সময় ধরে দায়িত্ব পালন করছেন। বহু অনিয়ম, অভিযোগ তাদের শুনতে হয়। এসবের মধ্যে কোথাও স্পিডব্রেকার, অবৈধ অটোরিকশা, বিহারী ক্যাম্পে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ, হিটার চালনা, আরও সরকারি জায়গা দখল , পোল্ট্রি মুরগী লোড আন লোড, বিপনন। অস্বাস্থ্যকর মাছের দোকান। সেপটি ট্যাংক লাইন সরাসরি ড্রেনে দেয়ায় দুর্গন্ধ, রাস্তার উপর গ্রিল নির্মাণে যাতায়াতে বিঘ্ন, শব্দ দূষণ। বিহারী কিশোর গ্যাং, গেম এবং পর্নোগ্রাফি প্রদর্শনে মোবাইল ভাড়া, ক্যাম্পে বাংলা মদের আসরসহ ইত্যাদি অভিযোগ তাদের শুনতে হয়। বিচার শালিশ করতে হয়। কিন্তু খোলা যায়গা, গ্রীণ জোন তৈরিতে,দখলী যায়গা উদ্ধার করতে, তাদের ক্ষমতা সীমিত। এখানে উচ্চ মহলের পদক্ষেপ প্রয়োজন মনে করেন, উভয় কমিশনার।

বাইশটেক' লেক ও সাংবাদিক আবাসিক লেকের দুই পাশে সরকারি অনেক জায়গা বেদখল। গাছ শূন্য করা হয়েছে। এতে পরিবেশ ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। এখানে ঢাকা-১৬ আসনের মাননীয় এম পি জনাব ইলিয়াস উদ্দীন মোল্লা। কালসী রোড দক্ষিন, সাংবাদিক ও ইঞ্জিনিয়ার হাউজিং এর পশ্চিম সড়কে, কাজের সময়, এম পি সাহেবকে নিজে উপস্থিত থেকে, কাজের তদারকি করতে দেখা গেছে। কিছু যায়গা তখন দখল মুক্ত হয়েছিল। কিন্তু এর কিছুদিন পর, আবার যেই সেই। ৬০ ফিটের রাস্তা ৪০ ফিট। ২০ ফিট রাস্তার জায়গা নন বেঙ্গলিদের দখলে থেকে যায়। এসব রাস্তার আশপাশে সবুজ কোন গাছ নেই।

ঢাকা উত্তর সিটি ককর্পোরেশন এর মাননীয় মেয়র আতিকুল ইসলাম এবং তার প্রশাসনিক কর্মকর্তাসহ সাংবাদিক আবাসিক অফিসে, এক আন্তরিক চায়ের আমন্ত্রণ গ্রহণ করেন। সেসসয় মেয়র নিজে পায়ে হেটে অনেক দূর যান। ৫নং ও ৩নং ওয়ার্ড সংযোগস্থলঃ সাংবাদিক লেক দক্ষিণ, সবুজবাগ ও মদিনা নগর আবাসিক এলাকায়, বেশ অনেক যায়গা তিনি ও তার টীম উদ্ধার করেন। এবং সরকারি যায়গা দখলকারীদের বিরুদ্ধে, কঠোর সাবধান বাণী উচ্চারণ করেন মেয়র। কিন্তু শোনা যায়, সেখানেও অনেক প্রভাবশালী এবং কিছু যায়গার ওপর বহুতল ভবন করে রেখেছে। যার কারণে, দখলকৃত যায়গা উদ্ধারে শতভাগ ফলাফল অর্জন হয় নি। প্রভাবশালীরা যায়গা ছাড়েন নি। তাদের ভাড়াটিয়া দিয়ে, যায়গায় ভোগ দখল রাখছে।

পাশের ৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর জনাব জহিরুল ইসলাম মানিকের নেতৃত্বে খেলার মাঠের দাবিতে, ক্রমাগত আন্দোলন চলছে। মাঠের দাবিতে বৃহস্পতিবার ২৯ সেপ্টেম্বরও সারাদিন মিছিল মিটিং চলে। অসংখ্য ছাত্র ছত্রী ও ইরানি ক্যাম্পের লোকজনের প্রাণের দাবি, প্লট বরাদ্ধ বাতিল করে,প্যারিস রোডের এই খেলার মাঠটির জায়গা বহাল রাখার পক্ষে।৫ং ওয়ার্ডের বাসিন্দারা আন্দোলনে না নামলেও মাঠ, গ্রীনজোন তাদের অনেক বেশি দরকার।

লিটল ফ্লাওয়ার্স প্রিপারেটরি স্কুলের প্রধান শিক্ষক মিয়া আব্দুল হাকিম জানান, "আমার স্কুলের ছেলে মেয়েদের খেলবার কোনো যায়গা নেই। পল্লবী মহিলা ডিগ্রি কলেজ মাঠে, কতৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে, ছাত্র ছাত্রীদের বাৎসরিক ক্রিড়া অনুষ্ঠানে নিয়ে যাই। খেলার নিয়ম রক্ষা করি মাত্র।"

৫ নং ওয়ার্ডের খোলা জায়গার অভাব অনুসন্ধানে গেলে দেখা যায়, কালশী ২২তলা গার্মেন্টস ২শিফটের হাজার হাজার নারী পুরুষ শ্রমিক কাজ করেন। একটু পার্ক বা খোলা যায়গার অভাবে তারা যেন পাখির খাঁচায় বন্ধী। জীবন তাদের দুর্বিসহ। কেউ কেউ সন্ধার পর দারোয়ানের বাঁধা অতিক্রম করে, সামনে উড়াল সেতুর উপর উঠে যায়। একটু খোলা আকাশের জন্যে,একটু বাতাসের জন্যে। এদিকে পলাশ নগরেও গোপনে গড়ে ওঠা অনুমোদন বিহিন, কাঠ ফার্ণিচার,জুতা,সুতার অগুনতি ফেক্টরি। এখানে সরু গলি। শ্রমজীবী মানুষের নিশ্বাস ফেলবার উপায় নেই। এখানেও মানুষের চাহিদা পার্ক। একটু গ্রীণ জোন।

পর্যবেক্ষণ মহল মনে করে, পরিচ্ছন্ন স্বাস্থকর পরিবেশ গড়ে তুলতে, মোটেও সহায়ক নয়, ঢাকার এই জনবহুল খোলা যায়গাহীন ৫নং ওয়ার্ড। ওয়াব্দা কলোনীর মোঃ খালিদ হোসেন বেনারসি দুঃখ করে বলেন, "আমাদের বউ, বাচ্চারা জীবনে মাঠ দেখে নি। সবুজ ঘাসের খোলা যায়গা দেখে নি। বড় হচ্ছে গিঞ্জি পরিবেশে।

সরকার যদি আমাদের হাই রাইজ বিল্ডিং করে দেয়, তখন আমাদের আশপাশের যায়গা নিয়ে মাঠ করা যাবে। আল্লাহর আকাশ তো সবটা খালি।" ৫নং ওয়ার্ডের ৭টি ব্লকে স্থপতি বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে নিরাপদ পরিবেশ, গ্রীণজোন করা সম্ভব। নিউ সোসাইটি মার্কেট, মোহাম্মদীয়া মার্কেট, কামার গলি এবং নান্নু মার্কেট,কিছু ডুয়েপ প্লট,বাউনিয়া বাঁধ ও টিন শেডের বাজার সেইসাথে ক্যাম্পগুলোর স্থাপনা অনিরাপদ। ঝড় তুফানসহ অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকিতে। এসব স্থাপনা স্থানান্তরিত করা প্রয়োজন।

১০, ১১নং মধ্যবর্তী ও বাউনিয়া বাঁধ সিটি কর্পোরেশন মার্কেটের কাজ অসম্পূর্ণ। তা দ্রুত শেষ করে বাইরের মার্কেট স্থানান্তর হলে,শত শত ডিসিম ফাকা যায়গা বের হবে। গিঞ্জি পরিবেশের বদলে, হাই রাইজ বিল্ডিং খেলার মাঠ,গ্রীণ জোন,পার্ক সৃষ্টিতে স্থানীয়ভাবে উন্নয়ন হবে। পরিবেশ ভারসাম্যে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসতে পারে। এখানকার মানুষের অন্তর্নিহিত প্রত্যাশা আমার বাড়ির পাশে, ফ্লাটের পাশে, আহা!আমাদের একটা সবুজ মাঠ!

গ্রিন জোন মাঠ তীব্র সংকট সরকারি জায়গা বেদখল

মন্তব্য / থেকে প্রত্যুত্তর দিন