ডার্ক মোড
Thursday, 02 May 2024
ePaper   
Logo
কালের স্বাক্ষী নবাব আলী আমজদের বাড়ি 'জমিজমা নিয়ে গেছে সরকার আমরা এখন শুধু নামের নবাব '

কালের স্বাক্ষী নবাব আলী আমজদের বাড়ি 'জমিজমা নিয়ে গেছে সরকার আমরা এখন শুধু নামের নবাব '

 

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি

নেই সেই জমিদারি আমলের পাইক পেয়াদা নায়েব। নেই কোলাহল। সর্বত্র পিন পতন নীরবতা।একধরনের জনমানব শুন্য পরিত্যক্ত বিশাল একটি বাড়ি। বাড়িটির সামনে ৬০- ৭০ একরের বিশাল দিঘি। কিছু পুরনো দালান কোটা আর দিঘির দুই পাড়ে শতবর্ষী কয়েকটি বটগাছ। দিঘির পুব পাড়ে আছে কয়েক'শ বছরের পুরনো গ্র‍্যাবইয়ার্ড। যেখানে শায়িত নওয়াব আলী আমজদ খাঁন।

প্রধান ফটকের পাশে ছোট্ট একটি ঘর। ছবি তুলতে গেলে এলাকার কয়েকজন এগিয়ে এসে জানালেন, এখানে ছবি তোলা নিষেধ। এটা শাহ ডিঙি(রঃ)র মাজার। অনেক গরম মাজার এটি। ২০০৫ সালে জেএমবি এই মাজারে বোমা হামলা করেছিলো। কিন্তু রক্ষে পায়নি। ধরা পড়েছিলো কয়েক ঘন্টার মধ্যে। কালের স্বক্ষী" পৃথিমপাশা নওয়াব বাড়ির চিত্র এটি । নওয়াব আলী আমজদ খানের বাড়ি।দেশের ইতিহাস ঐতিহ্যের স্মারক।

মৌলভীবাজার জেলা সদর থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরে কুলাউড়া উপজেলার পৃথিমপাশা ইউনিয়নের নওয়াব বাড়িতে গেলে এমন চিত্র দেখা যায়। দেখা যায়, পুরাতন একটি দালানের সামনে কয়েক যুবক ছবি তুলছেন জানালেন 'বিনোদনের জন্য ঘুরতে এসেছি। বাড়িটি অনেক পুরাতন এবং বৃটিশ বিরোধী আন্দোলন, দেশ বিভাগ সর্বশেষ স্বাধীনতা সংগ্রাম তথা ইতিহাস ঐতিহ্যের স্মারক। তাই আমাদের এই দেখতে আসা'।

তারা আরও জানালেন, 'এটা ইমাম পাড়ার হোসেনি দালান। শিয়াদের এক ঐতিহ্য। প্রতিবছর মহরহম মাসের শুরু থেকে ১০ দিন এখানে অনেক আয়োজন চলে। কারবালার প্রান্থরে শহীদ ইমাম হাসান ও হোসেন (রাঃ)এর স্মরণে এখানে কাতল মঞ্জিল পালিত হয়। চলে মর্সিয়া ক্রন্দন। বয়ান হয় শিয়া ধর্মের নানা বিষয় নিয়ে । রাজধানী ঢাকা এমনকি ইরাক ইরান পাকিস্তান আফগানিস্তান থেকেও আসেন অনেক শিয়া ইমাম । শিয়াদের ধর্মীয় দীক্ষা চলে সারা বছর।

সামনে এগুতেই বিশাল গেইট। বাইরের সাইনবোর্ডে লিখা রয়েছে নওয়াব আলী ইয়াওর খাঁন। পৃথিমপাশা ষ্টেইট ও গার্ডেন । প্রধান ফটকের সামনে গেলে ষাটোর্ধ আহমেদ আলী দ্রুত হাজির। জানালেন আর ভিতরে যাওয়া যাবে না। প্রবেশ নিষেধ। বাড়িতে কেউ নেই।
তিনি জানান,' বাড়িতে ঢুকা যাবে না। নওয়াব সাব( নওয়াব আলী ইয়াওর খান) মারা যাওয়ার পর থেকে বেগম সাব ৬ মেয়ে নিয়ে ঢাকায় থাকেন'।
পুরোনো মসজিদ দেখিয়ে জানতে চাইলে ৪ ছেলে মেয়ের জনক আহমদ আলী জানালেন, মসজিদে প্রতি শুক্রবার শিয়া ধর্মের লোকজন তথা নওয়াব পরিবার প্রথম জামাতে নামাজ পড়েন।পরে সুন্নী
মতাদর্শের লোকজন নামাজ পড়েন। তবে নেই ইরান ইরাক পাকিস্তান আফগানিস্তানের মতো মারামারি হানাহানি।
হঠাৎ দেখা পেলাম জমিদার হয়েও ভাসানী ন্যাপের হয়ে যিনি জমিদারি প্রথার বিরুদ্ধে লড়েছিলেন সেই আলী সফদর খাঁন রাজা সাহেবের ছোট ছেলে পৃথিমপাশা ইউনিয়নের সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান নওয়াব আলী বাখর খাঁন হাসনাইনের। তিনি সব কিছু অামাকে ঘুরে ঘুরে দেখালেন।
আলী বাখর খাঁন জানান, ৬০০ বছর আগে মুর্শিদাবাদ -পাটনা থেকে এসেছিলেন তাদের পুর্বপুরুষেরা। প্রথমে যারা এসেছিলেন তাদের এক জনের নামে দিঘির নামকরণ হয়েছে 'খান জাহান খাঁন দিঘি'।
জানা যায়, বাংলাদেশের ইতিহাস ঐতিহ্যের সাথে মিশে আছে এই নওয়াব বাড়ি। এই বাড়ির নওয়াব গৌছ আলী খাঁন বৃটিশ সিপাহি বিদ্রোহীদের আশ্রয় দিয়ে মামলা খেয়েছেন। নওয়াব আলী হায়দার খাঁন ছিলেন আসাম প্রাদেশিক সরকারের পূর্ত ও কৃষি মন্ত্রী । আলী আজগর খাঁন ১৯৪৬ সালের রেজিষ্টিভ এসেম্বলিতে মেম্বার ছিলেন। আর নওয়াব আলী ইয়াওর খাঁন ছিলেন বেসিক ডেমোক্রেসির সময় ২ বার মুসলিম লীগের প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য । নওয়াব বাড়ির রাজনৈতিক উত্তরাধিকার মৌলভীবাজার -২ (কুলাউড়া) আসনের ৩ বারের সাবেক এমপি নওয়াব আলী আব্বাস খাঁন। করেন জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর)।

তিনি জানান, তাঁর চাচা নওয়াব আলী সরোয়ার খাঁন ১৯৭০ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে পাকিস্থান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। পরে বাংলাদেশ কন্সটিটিউন্সি এসেম্বলির মেম্বার ছিলেন। ১৯৭৩ সালে ব্যারিস্টার আব্দুল মুত্তাকিম চৌধুরী এমপি নির্বাচিত হলেও সরকার তাঁকে যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের হাই কমিশনার নিয়োগ দেওয়ায় তিনি সেখানে চলে যান। উপনির্বাচনে আলী সরোয়ার খাঁন মেম্বার অব পার্লামেন্ট নির্বাচিত হন।

সাবেক এই এমপি আরও জানান, ১৯৭৩ সালের নির্বাচনে তাঁর পিতা আলী সফদর খাঁন (রাজা সাহেব) ভাসানী ন্যাপের প্রার্থী হিসেবে ' ধানের শীষ 'প্রতীক নিয়ে অল্পের জন্য হেরে যান। যদিও সেই নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন আছে।

নওয়াব আলী আব্বাস খাঁন আরও বলেন,'আমাদের জমিজমা সব সরকার প্রজাদের নামে রেকর্ড করে বাজেয়াপ্ত করে দিয়েছে। এখন ৩ পরিবারে একটি করে চা বাগানে আর ৬০ বিঘা করে জমি আছে । বৃটিশ সরকার ৩০০ বিঘা করে দিয়েছিলো । পরে পাকিস্তান হওয়ার পর প্রথমে ১০০ বিঘা থেকে পরে ৬০ বিঘা। জমি জমা সব সরকার নিয়ে গেছে। আমরা এখন শুধু নামের নওয়াব'।

মন্তব্য / থেকে প্রত্যুত্তর দিন