ডার্ক মোড
Thursday, 28 March 2024
ePaper   
Logo
কালাইয়ে কীটনাশক ছাড়া ফুলকপি চাষে সফল এনামুল

কালাইয়ে কীটনাশক ছাড়া ফুলকপি চাষে সফল এনামুল

কালাই (জয়পুরহাট) প্রতিনিধি

জয়পুহাট জেলার কালাই উপজেলার উদয়পুর ইউনিয়নের বহুতি-দরগাপাড়া গ্রামে প্রথম বারের মতো শীত মৌসুমে ফুলকপির চাষ করে সফল হয়েছেন কৃষক মো.এনামুল হক। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বায়ারের হাইব্রিড জাতের ৫৩/৪০ ফুলকপি তার জমিতে ভালো ফলন হয়েছে।

এ ফুলকপি চাষে তিনি কোন ক্ষতিকর কীটনাশক ও রাসায়নিক সার ব্যবহার করেনি। জৈব্যবালাই নাশক ও কেঁচো সার ব্যবহার করে ফুলকপি চাষ কওে ব্যাপক সাড়া ফেলেছন। কম সময়ে, অল্প পরিশ্রমে ও স্বল্প খরচে অধিক মুনাফা করছেন তিনি।

এই জাতের ফুলকপি বাজারে কদর বেড়ে যাওয়ায় বর্তমান বাজারে চাহিদা অনেকটা ভালো। এনামুলের পর স্থানীয় অনেক কৃষকরাই আগামীতে ফুলকপি চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। ফুলকপি চাষের সময়, খরচ ও শ্রম কম লাগে। তাই অন্যান্য ফসলের বদলে ফুলকপি চাষ করবেন তারা।

গত রবিবার বিকেলে কালাই সদর থেকে উত্তর-পূর্ব কর্ণারে আকাঁ-বাকা পিচঢালা রাস্তা দিয়ে বাইক নিয়ে প্রায় ৮ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে ও জমির আকাঁ-বাকা কাঁচা আইলে পথ ধরে তাঁর কাছে যাওয়ার সময় জমির আইল দিয়ে এগোতেই দেখা যায় ৬০ শতক জমির ফুলকপির রাজ্য। একেকটি ফুলকপির ওজন ১ থেকে ২ কেজি। নিজের ফুলকপি ক্ষেতে মনোযোগ দিয়ে পরিচর্যা করছেন এনামুল। সেখানেই শোনান তার ফুলকপি চাষের গল্প।

১৯৯০ সালে জন্ম এনামুল হক। চার ভাইবোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। অভাবের সংসার, তাই লেখাপড়া করা হয়নি। তিনি স্থানীয় আলুর কোল্ড স্টোর শ্রমিকের কাজ করতেন। কাজ পেলে খাবার জুটত, না পেলে অনাহারে থাকতে হতো। তিনি নিজেই সিদ্ধান্ত নেন কিছু করবেন। তার এলাকাতে অনেক ভালো সবজি চাষ হচ্ছে।

এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে তিনি সবজি চাষ করবেন। তাই ২০১২ সালে তার কাছে কিছু জমানো টাকা ও ধার-দেনা কারে ৯ শতক জমি বর্গা নিয়ে চিচিংগা চাষ শুরু করেন। সেই সময় তিনি সবকিছু খরচ বাদ দিয়ে প্রায় ৭০ হাজার টাকা আয় করেন। দিনমজুর থেকে এনামুল হক হয়ে ওঠেন সফল সবজি চাষি।

কেনেন ৩০ শতক জমি, বানান টিনের বাড়ি। ঘরে আছে আসবাবপত্র, টেলিভিশন ও ফ্রিজ। গোয়ালে আছে তিনটি বিদেশী গরু। আছে একটি পুকুর। তাঁর দুই ছেলে। বড় ছেরে স্কুলে পড়ছে। স্ত্রী আনজুয়ারা বেগম আর এনামুল হকের লেগে থাকেন সবজি চাষে। এবার তিনি ৬০শতক জমি বর্গা নিয়ে বায়ারের হাইব্রিড জাতের ৫৩ ও ৪০ ফুলকপি রোপোণ করেছেন। এই ফুলকপি চাষে তিনি কোন ক্ষতিকর

কীটনাশক ও রাসায়নিক সার ব্যবহার ছাড়ায় জৈব্যবালাই নাশক এবং কেঁচো সার ব্যবহার করে ফুলকপি চাষ করেছেন। অল্প পরিশ্রমে ও স্বল্প খরচে রোপোনের ৭০ থেকে ৭৫ দিনের মধ্যেই এই ফুলকপি ঘরে তুলছেন।

এবার বাজারে ফুলকপি চাহিদা রয়েছে প্রচুর। ফলে বাজারে চাহিদা থাকায় বিক্রি করতেও ঝামেলা নেই। তার জমিতে প্রায় সাড়ে ৮ হাজার কপির চারা রোপণ করেছেন। পাইকারি দরে এই পর্যন্ত ৯৫ টাকার ফুলকপি বিক্রি করেছেন। আরো ৩ হাজার পিস ফুলকপি বিক্রি করা যাবে। আগামী ১ সপ্তাহের মধ্যে এগুলো সব বিক্রি হয়ে যাবে। তার এই ফুলকপির উৎপাদন খরচ পড়েছে প্রায় ১৪ হাজার টাকা। তিনি আশা করছেন সকল খরচ বাদ দিয়ে মুনাফা হবে প্রায় দেড় লাখ টাকা।

উপজেলার বহুতি-দরগাপাড়া গ্রামের কৃষক হাফিজার ও জালাল মিয়া জানান, ধান, আলু ও ভুট্টার চেয়ে ফুলকপি চাষে খরচ ও শ্রম দুটোই কম লাগে। এসব ফসল চাষে খরচের পাশাপাশি রোগ বালাইয়ের আক্রমণের আশঙ্কাও কম।

তাই অন্যান্য ফসলের বদলে আগামীতে ফুলকপি চাষে করবেন তারা। সেখানে আরেক কৃষক রিফাদ বলেন, ধান ও আলুর আবাদ করে লাভ তো দূরের কথা, বীজ, সার ও শ্রমিক খরচের টাকাই ওঠে না। আবার দামও ন্যায্য পাওয়া যায়না। কিন্তু এনামুল নতুন করে ফুলকপি চাষ কারই এলাকায় ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন। তাই অন্য ফসলের তুলনায় ফুলকপি চাষে অধিক লাভজনক হওয়া সম্ভব।

কালাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ অরুণ চন্দ্র রায় বলেন, এই অঞ্চলের আবহাওয়া ও মাটি সবজি চাষের জন্য খুবই উপযোগী।

এই উপজেলায় শীতকালীন ১০ হেক্টর জমিতে ফুলকপি চাষ হয়েছে। আমাদের কৃষি বিভাগের পরামর্শে এই অঞ্চলের মানুষ আধুনিক চাষের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছেন। চাষিরা শীতকালীন ফুলকপি চাষ করে বেশ লাভবান হচ্ছেন। তারা ফুলকপি চাষ করে দাম ও ফলন দুটোই ভালো পাচ্ছেন। এর ফলে এই এলাকার কৃষকরা ফুলকপি চাষের আগ্রহ বাড়ছে।

মন্তব্য / থেকে প্রত্যুত্তর দিন