ডার্ক মোড
Thursday, 02 May 2024
ePaper   
Logo
এলো আশাজাগানীয়া ২০২৩ : ২০২৩-কে দেখতে চাই ভিন্ন আঙ্গিকে ২০২৩ হউক হানাহানীমুক্ত

এলো আশাজাগানীয়া ২০২৩ : ২০২৩-কে দেখতে চাই ভিন্ন আঙ্গিকে ২০২৩ হউক হানাহানীমুক্ত

মীর আব্দুল আলীম

ভূপৃষ্ঠের আরও ১টি বছর কালের গর্ভে হারিয়ে গেল; ২০২৩শে পা রাখল বিশ্ব। শুরুতেই কবিতার ভাষায় বলতে হয়-“২০২২কে বলতে ইচ্ছে হয়, ‘যা পেয়েছি, তাও থাক, যা পাইনি তাও, যা কখনও চাইনি, তাই মোরে দাও”। জয়তু: ২০২২ এবং সুস্বাগতম ২০২৩। মঙ্গলময় হোক ২০২৩; হানাহানীমুক্ত হউক ২০২৩ সালটা।

অনেক ঘটন-অঘটন, প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি, চড়াই-উৎরাই, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, মন্দা ও আনন্দ-বেদনার সাক্ষী হয়ে হারিয়ে গেছে ২০২২। সময়ের এক একটি পাতা এভাবেই ঝরে যায়। গত বছরের প্রত্যাশা আর প্রাপ্তির হিসাব খুঁজতে খুঁজতে নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে হয়।

নতুন আলো-নতুন আশার স্বপ্ন জাগিয়ে এ বছরে সূর্য উদয় হয়েছে। শুরু হয়ে গেছে নতুন আরেকটি বছর ২০২৩। কেমন যাবে বছরটি? ২০২৩ সালকে আমি দেখতে চাই ভিন্ন আঙ্গিকে। দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা হবে।

দেশের মানুষগুলো বদলে যাবে। মানুষ মানুষের জন্য হবে। জীবন হবে জীবনের জন্য। আর খুন হবে না, গুম হবেনা দেশে। ফেন্সিডিল, ইয়াবার রাজ্যে আগুন জ্বলবে, ভূমিদস্যুরা দেশ ছেড়ে পালাবে, ঘুষখোররা আর খুষ খাবে না।

মাতৃত্ব, পিতৃত্ব, ভ্রাত্বিত্য আর বন্ধুত্বেও বন্ধন হবে অটুট। ছাত্র শিক্ষক সম্পর্ক নিবিড় হবে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হবে। গণতন্ত্র বজায় থাকবে। মায়া-মমতায় পূর্ণ থাকবে আমাদের প্রতিটি পরিবার, আমার এ দেশ।

নানা দিক থেকেই ২০২২ সালটি ছিল অত্যন্ত ঘটনাবহুল। এর মধ্যে বছরজুড়ে আলোচিত ছিল স্বপ্নের পদ্মা সেতুর উদ্ভোধন। সেতুটি ২০২২ সালের ২৫ জুন উদ্বোধন করা হয়। যা এদেশের মানুষের কাছে ছিলো অনেকটা বিশ্বয়ের।

এ বছর বিশ্বমন্দা, কোভিড পরিস্থিতি আর ইউক্রেন যুদ্ধ বাংলাদেশের অর্থনীতিকে বিদ্ধস্ত করে। দ্রব্যমূল্যেও উদ্ধগতি আতংকিত করে জনগনকে। এর মাঝে বছরের শেষটা ছিলো রাজনৈদিক সংঘাত সংঘর্ষ এবং শংকার। আলোচিত ছিলো ১০ ডিসেম্বরের বিএনপির মহাসসমাবেশ। সব কিছু ছাড়িয়ে স্বাপ্নের মেট্রোরেল চালু হলো ২০২৩ ছুঁই ছুঁই অবস্থায়। নানা ঘটনা আর অঘটনের এই বছরের শেষটা ভালই ছিলো বলা যায়।

২০২২ এর শুরুতে সামাজিক, অর্থনৈতিক নানা সূচকে বাংলাদেশ এগিয়ে গেলেও বছরের শেষটাতে রাজনৈতিক সংঘাত, আর্থিক মন্দায় দেশ কাটিয়েছে। এভাবেই শেষ হয়ে গেলো ২০২২। পৃথিবীতে কত বদল হয়েছে এ বছরে, ঘটেছে কত পরিবর্তন নানান দেশে, নানান সমাজে। এসবের প্রভাবে বাংলাদেশেও পড়েছে। দেশ ও বিদেশের সাথে তালমিলিয়ে উন্নত হয়েছে প্রযুক্তিতে।

পৃথিবীর ও বৃহত্তর মানব জীবনের পথ পরিক্রমায় ৩৬৫ দিন নিশ্চিতভাবে পরমাণুসম ক্ষুদ্র, একটি দেশ বা সমাজের সার্বিক বিবর্তনেও একটি বছর তেমন কিছু নয়, একজন ব্যক্তি মানুষের পুরো জীবন বলয়েও হয়তো একটি বছরের সামগ্রিক গুরুত্ব তেমন একটা বড় নয়, তবু প্রতিটি বছরই তার নিজস্ব তাৎপর্যে ভাস্বর যেমন পুরো পৃথিবীর জন্যে, তেমনি একটি দেশ বা সমাজের জন্য এবং সেই সঙ্গে একজন ব্যক্তি মানুষের জন্যে।

বছরটা চলে গেলেই গাইতে মন চায়-“আগে কী সুন্দর দিন কাটাইতা” এমন গান আমি আর গাইতে চাই না। আমি গলা ছেড়ে গাইতে চাই- “এখন কী সুন্দর দিন কাটাই ভাই, এখন কী আরামে দিন কাটাই ভাই।” হিংসা-প্রতিহিংসার ঊর্ধ্বে উঠে রাজনীতিকরা পরমতসহিষ্ণু হয়ে প্রতিপক্ষের সঙ্গে পারস্পরিক শ্রদ্ধার আবহ তৈরি করে জনকল্যাণে সবাই একসঙ্গে মনোযোগী হবেন। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকবে। আইন হয়ে উঠুক সব কিছুর নিয়ামক।

শাসকদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে। জুলুম হবেনা। গরীব মর্যাদা পাবে। সবলের কাছে অসহায় হবে না কেউ। কারো চোখে জল আসবে না। কারো রক্ত ঝড়বে না। বিনা চিকিৎসায় কেউ মরবে না। কেউ আর ভেজাল দেবে না খাবারে। মিথ্যা মামলা, হামলা, অনাচার বিবাদ দূর হবে দেশ থেকে। এমন স্বপ্নইতো ২০২৩কে নিয়ে দেখি।

জাতীয় নির্বঠঢ়নের বছর হতো এটা। মনে সংশয়, মনে অনেক ভয়, কী জানি কী হয়। হে খোদা ২০২৩টা ভালো যাক সবার। তুমি কৃপা করো। দিন যায়, দিন আসে। মানুষ বয়েসী হয়। বয়স বাড়ে আমাদের পৃথিবীরও। প্রাচীন হয়, হতে থাকে এভাবে আমাদের জগত-সংসার। অভিজ্ঞতায় অভিজ্ঞতায় মানুষও সমৃদ্ধ হয় ক্রমশ। অনেকের তাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রার চড়াই-উৎরাই পার হতে হতে ভাবে যেসব দিন পেছনে পড়ে রইলো তা থেকে গেলো জীবনের সঞ্চয় রূপে স্মৃতি হিসেবে।

কেউ কেউ আবার কালবৃক্ষের ঝরাপাতা নিয়ে আবেগে তাড়িত হয়। ফেলে আসা দিনগুলোর পাওয়া-না পাওয়ার হিসাব মিলাতে গিয়ে হিমসিম খায়। অনেকের অবশ্য এসব নিয়ে কোনো মাথাব্যথা থাকে না। তাদের কোনো হা-হুতাশ করার অবসরই থাকে না। তাদের থাকে দিন গুজরানোর সংগ্রাম। থাকে একটি দিনের সকল সাংসারিক প্রয়োজন মিটিয়ে পরবর্তী দিনের ভাবনা, ভালো কাটানোর আর সঙ্কটবিহীন জীবনের স্বপ্ন। এই স্বপ্নই আসলে মানুষকে সংগ্রামের প্রেরণার যোগান দেয়, সুখ-দুঃখের জীবনকে সহনীয় করে চলে।

আছে দুঃখ, আছে মৃত্যু, বিরহদহন লাগে, তবুও শানি-, তবু আনন্দ, তবু অনন- জাগে। ‘কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গানের এ কথার মতই দুঃখ, কষ্ট সবকিছু কাটিয়ে নতুন জীবনের দিকে যাত্রার প্রেরণা নেবে মানুষ। নতুন বছরটি যেন সমাজ জীবন থেকে, প্রতিটি মানুষের মন থেকে সকল গ্লানি, অনিশ্চয়তা, হিংসা, লোভ ও পাপ দূর করে।

রাজনৈতিক হানাহানি থেমে গিয়ে আমাদের প্রিয় স্বদেশ যেন সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে যেতে পারে এ প্রত্যাশা আমাদের। ২০২৩ সালটা আমাদের জন্য এ বছরটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রাজনৈতিক ও কূটনৈতিকসহ বিভিন্ন অঙ্গনে এ বছরেই রয়েছে বড় বড় কতগুলো ইভেন্ট। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ইভেন্টগুলো হলো- দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সংবিধান অনুযায়ী এ বছরের শেষে অথবা ২০২৪ এর শুরুর কোনো এক সময় জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। বাংলাদেশে প্রতিটি নির্বাচনের বছর ঘটনাবহুল সহিংসতায় ভরপুর থাকে। তাই শংকার বছরই বলা যায় এটা।

২০২৩ সালটা তেমনই এক সহিংসতার কালো মেঘের আশঙ্কার মধ্যে শুরু হচ্ছে। রাজনীতি উত্তপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এরপর নির্বাচন কেন্দ্রিক উত্তাপ বছরজুড়েই বাংলাদেশকে এক অগ্নিকুন্ডে রাখবে বলেই রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের মধ্যে নির্বাচন কেন্দ্রিক দূরত্ব কমেনি বরং দুই প্রধান রাজনৈতিক দলই তাদের নিজেদের অবস্থানে অনঢ় থাকার ঘোষণা দিয়েছে। এরকম প্রেক্ষাপটে ২০২৩-র সবচেয়ে বড় প্রশ্ন, কীভাবে একটি অংশগ্রহণমূলক অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব? তবে, ২০২৩-র প্রবেশ মুখে দাঁড়িয়ে একটি কথা নি:সন্দেহে বলা যায়, ২০২৩-র নির্বাচন ২০১৮ এর মতো প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন, রাতের ভোটে হবে না। এই নির্বাচন যদি সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে শেষ পর্যন্ত না হয় তাহলে গণতন্ত্র মুখ থুবড়ে পড়তে পারে।

গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার অগ্রযাত্রা নাকি অনির্বাচিত শাসনের পুনরাবৃত্তি ঘটবে ২০২৩তে? অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হলে, সেই নির্বাচন দেশেকে কোন পথে নেবে, সেটাও ভেবে দেখার বিষয়। এই বছর আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে, জাতি হিসেবে আমরা কোন পথ বেছে নেব? উন্নয়ন, অগ্রগতি এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পথ- নাকি গণতন্ত্রের নামে আবার জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ আর দুর্নীতিকে আলিঙ্গন করবে বাংলাদেশ? আমাদের আশাবাদ, নতুন বছরে যেন ওই ধরণের কোনো পরিস্থিতি তৈরি না হয়, জনগণের জীবনে যেন কোনো বিরূপ প্রভাব না ফেলে।

নতুন বছর যেন সমাজ জীবন থেকে শুরু করে প্রতিটি মানুষের মন থেকে সকল গ্লানি, হতাশা, হিংসা দূর করে। এদিকে ২০২৩-কে ঘিরে অনেক প্রত্যাশা, অনেক স্বপ্ন, অনেক কল্পনা। পুরোপুরিভাবে মেট্রোরেল চালু হবে, বঙ্গবন্ধু টানেল চালু হবে। বিশাল স্বপ্ন আমাদের সামনে। যদিও সময়ের বিচারে খুব দীর্ঘ নয় একটি বছর, মাত্র তিনশো পঁয়ষট্টিটি দিন। তবু মানুষকে প্রতিটি দিনই ইঙ্গিতে-ইশারায় ডাকে।

অজানা আগামীকালের পথে ডেকে নিয়ে যায়। দিন থেমে থাকে না। আলো ও আঁধারের অবিচ্ছিন্ন আবর্তনের ভেতর দিয়ে এগিয়ে যায় নতুন বছর। পুরনো বছরের ধূসর দিনগুলোর কথাও পাশাপাশি আমাদের মনে পড়বে কী পেয়েছি, কী হারিয়েছি। নতুনের প্রতি সবসময়ই মানুষের থাকে বিশেষ আগ্রহ ও উদ্দীপনা।

নতুনের মধ্যে নিহিত থাকে অমিত সম্ভাবনা। সেই সম্ভাবনাকে বাস্তবায়ন করার সুযোগ করে দিতে এলো নতুন বছর। অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে নতুন করে এগিয়ে চলাই জীবন। দেখা যাক, নতুন বছর আমাদের জন্য কী সুবাতাস নিয়ে আসে।

আসলে সৃষ্টির আদিকাল থেকেই চলছে সুদিনের সন্ধান। আমরা ২০২৩ সালকে সুদিন হিসাবে দেখতে চাই। আসছে দিন হোক ভালো দিন, এমন একটি ভাবনার বীজ মানুষের ভেতরে অঙ্কুরিত হয়েছে নিয়ত প্রতিকূল অবস্থার মোকাবেলা করতে করতে।

এই ভাবনা মানুষকে যুগে যুগে সৃষ্টিশীল করে তুলেছে। মানুষের মস্তিষ্কে খেলা করছে অবিরত চারপাশের বিরুদ্ধ পরিবেশ প্রভাব। তার থেকে বিদ্যুৎ চমকের মতো হঠাৎ হঠাৎ বিচ্ছুরিত হয়েছে উদ্ভাবনের আলো। সেই আলোর ঝলকের সাহায্যে মানুষ খুঁজে পেয়েছে জীবনযাত্রাকে সহনীয় করে তোলার নানা প্রযুক্তি। এই প্রযুক্তিই বদলে দিয়েছে মানুষের পৃথিবীকে। প্রযুক্তির হাত ধরে মানবের যে পথচলা, সেখানে অনিবার্যভাবেই যুক্ত হয়েছে প্রগতির চাকা।

বদলে গেছে জীবনধারা থেকে শুরু করে চিন্তা-চেতনার জগৎ। অবশ্যই পদার্থের প্রতিটি ক্রিয়ার বিপরীতে যে আরেকটি প্রতিক্রিয়া রয়েছে, তা থেকে কিন্তু এই মানবজীবন মুক্ত নয়। আবিষ্কার প্রযুক্তির ব্যবহার ও পরিবর্তনের নানা ধারার ভালো দিকটার পাশাপাশি মন্দটাও হুমকি হয়ে উঠেছে।

এই হুমকিটাও মোকাবেলা করে মানুষ এগোয়। অগ্রযাত্রা বয়ে যায় নদীর স্রোতের মতো। আসলে মানবজীবনের চারপাশে ছড়িয়ে রয়েছে বহু সঙ্কট। ধর্ম-দর্শনের চর্চার মাঝে মানুষ চেয়েছে, শান্তি, স্বস্তি, নিরাপত্তা ও আনন্দ-ভালোবাসায় মানবতাকে চিরজাগ্রত রাখতে।

চেয়েছে বিশ্বময় ছড়িয়ে দিতে বহুমত ও বহুপথের সমন্বয়ে নিজেদের পারস্পরিক মিলনের নিরাপদ আবাসভূমি। মানুষের এই স্বপ্ন যে পূরণ হয়েছে এই আকাঙ্খা যে বাস্তবায়িত হয়েছে বিশ্বময় তা কিন্তু নয়। কল্যাণ-চেতনার পাশেই অকল্যাণের অপশক্তি তাদের মতান্ধতা চাপিয়ে দিয়ে যুগে যুগে মানবতাকে বিপণন করে তুলেছে, মানুষের চিন্তাকে শৃঙ্খলে আবদ্ধ করে মুক্তির প্রশান্ত আকাশের  ডানা ছেঁটে দিতে প্রয়াসী হয়েছে।

মানুষের চিন্তার স্বাধীনতা-বিরোধী এই দানবতার প্রকাশ আজও বিশ্বের দেশে দেশে চলছে। তবে, মানবতাবাদী গণতান্ত্রিক মানুষেরাও থেমে নেই। শুভ-অশুভর এই সংগ্রামে দেশে দেশে মানুষের জীবনহানি ঘটছে। মানুষ তার চিরকালের বসবাসের আনন্দভূমি হারিয়ে নিদারুণ গ্লানিময় শরণার্থীর জীবন বহন করে ঘুরে মরছে আশ্রয়ের সন্ধানে দেশ থেকে দেশান্তরে।

এই অমানবিকতা থেকে মানুষকে মুক্তি দিতে হলে আজ শুভবুদ্ধি সব মানুষকে একতাবদ্ধভাবে অশুভ দানবদের আঘাত হানতে হবে। নতুন বছর, নতুন স্বপ্ন নিয়েই  শুরু হয়। চোখের সামনে এসে দাড়ায় ধূসর হয়ে আসা গল্পগাঁথার সারি সারি চিত্রপট। কখনো বুকের ভেতর উঁকি দেয় ব্যক্তিমানুষের একান্তই দুঃখ-যাতনা।  কখনো পাওয়ার আনন্দে নেচে উঠে হৃদয়। নানা আনন্দ আর হতাশা, অনিশ্চয়তা আর আবেগের মধ্য দিয়েই জীবন থেকে পার হলো আরো একটি বছর ২০২২। এলো আশাজাগানীয়া ২০২৩। আর এ বছরটি নতুন সম্ভাবনার দরজা খুলে দেবে আমাদের জীবনে এমনি প্রত্যাশা সবার। নতুন বছরের শুরুতে আমাদের কামনা এ ধারা বিস্তৃত হোক।

সেই সুদূর অতীতে মানবজীবন বিকশিত হবার পর্যায়ে কোথাও কোথাও সম্পদ জমতে থাকলে
অর্থনীতি ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ায় তা বিশেষ ক্ষমতা অর্জন করে পুঁজিবাদের পথে ধাবিত হয়। বর্তমানকালে এসে এই পুঁজিবাদ তাদের পুষ্টি-প্রভাব বিস্তৃত করার জন্যে নীতি-নৈতিকতাকে পাশ কাটিয়ে ধর্মান্ধতাকে প্রশ্রয়দেয়, পৃষ্ঠপোষণা করে।

আবার সেই অপশক্তি যখন পুঁজির শোষণের প্রতিদ্বন্দ্বী রূপে নিজেরাই আবির্ভূত হতে থাকে তখন ধ্বংস করার পদক্ষেপ নিয়ে যে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে যায় তাতেও তার ফায়দা সে লুটে নেয় অস্ত্র ব্যবসার মাধ্যমে। সাম্যবাদী চিন্তার অগ্রযাত্রাকেও ব্যাহত করেছে এই পুঁিজবাদী, ধর্মান্ধ গোষ্ঠীকে বিশ্বের নানা অঞ্চলে মদদ দিয়ে, প্রত্যক্ষ সহায়তা করে। আজকের মানুষকে তাই এই প্রবল দুই প্রতিপক্ষকে মোকাবেলা করে এগিয়ে যাবার কথা ভাবতে হবে।

দেশে দেশে শুভচিন্তার মানবতাবাদী মানুষকে সংঘবদ্ধ হয়ে জেগে উঠতে হবে। আজকের ২০২৩ সনের এই আগমনের দিনে সবার মাঝে জাগরণের এই ভাবনা ব্যাপ্তি লাভ করুক। সর্ব্বোশেষ নতুন বছরে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে থাকা সকল বাঙালির সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি প্রত্যাশা। আরও প্রত্যাশা হিংসা, বিদ্বেষ, বিভেদ ও হানাহানি পরিহার করে বাংলাদেশটা পরিণত হবে পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে সুখী ও সুন্দর মানুষের দেশে। নতুন বছরের কাছে প্রত্যাশা ভালো থাকার, সুন্দর থাকার।

দেশ হোক অস্থিতিশীলতা-সহিংসতা-নৃশংসতামুক্ত। চাই অর্থনৈতিক উন্নয়ন। নতুন বছরের কাছে চাওয়া একটি সুন্দর জীবন। সন্ত্রাসমুক্ত সমাজ, শিক্ষাঙ্গণে সুস্থ পরিবেশ। মানুষে মানুষে শ্রদ্ধাবোধ ও ভালোবাসা। সব মিলে হবে একটি শান্তিময় দেশ।

২০২৩-কে ঘিরে এমন স্বপ্নই দেখছি আমরা। অনাগত রাজনৈতিক হানাহানি, প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে আমাদের প্রিয় স্বদেশ মুক্ত থাকুক, সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে গিয়ে বিশ্বের দরবারে সম্মানের সঙ্গে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকুক, এই আমাদের প্রত্যাশা।

লেখক, সাংবাদিক, কলামিস্ট ও সমাজ গবেষক।

 

মন্তব্য / থেকে প্রত্যুত্তর দিন