
অন্নদা গোবিন্দ পাবলিক লাইব্রেরীতে শুরু হলো ৫ দিনব্যাপী পুস্তক প্রদর্শনী
পাবনা প্রতিনিধি
ভাষার মাস স্মরণে জেলা শহর পাবনায় শতবর্ষের ঐতিহ্যবাহী অন্নদা গোবিন্দ পাবলিক লাইব্রেরীর উদ্যোগে শুরু হলো ৫ দিনব্যাপী পুস্তক প্রদর্শনী। লাইব্রেরী ভবনের তৃতীয় তলায় স্যামসন এইচ চৌধুরী মিলনায়তনে প্রতিদিন সকাল ১০ থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত চলবে এই পুস্তক প্রদর্শনী।
ফিতা কাটার মধ্যে দিয়ে এবারের পুস্তক প্রদর্শনী উদ্বোধন করেন, পাবনা প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা রবিউল ইসলাম রবি। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন, অন্নদা গোবিন্দ পাবলিক লাইব্রেরির মহাসচিব আব্দুল মতিন খান, লাইব্রেরির কার্যনির্বাহী কিমিটির সদস্য রবিউল চবে ডাবলু, লাইব্রেরীর কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য কাজী রফিকুল আলম ও লাইব্রেরীয়ান আহসানুল আলম বকুল সহ আরও অনেকে।
এখানে প্রতিবছর ভাষার মাসে উল্লেখযোগ্য সংগৃহীত বই দিয়ে প্রদর্শনী আয়োজন করা হয়ে থাকে। তেমন পাঠক সমাগম না থাকলেও নতুন প্রজন্মের কাছে ইতিহাস ঐতিহ্য তুলে ধরার এক ব্যতিক্রমী উদ্যোগ এই পুস্তক প্রদর্শনী।
বই পড়ার প্রতি আগ্রহ সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রতিবছর এই আয়োজন করে আসছেন কর্তৃপক্ষ। তবে লাইব্রেরী ভবনের সামনে বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম বকুল স্বাধীনতা চত্বরে চলছে মাসব্যাপী একুশে বইমেলা।
জেলার প্রাণ কেন্দ্র গোপালপুরে দেশের অন্যতম গ্রন্থ সমৃদ্ধ অন্নদা গোবিন্দ পাবলিক লাইব্রেরীর অবস্থান। ১৩৬ বছরের পুরোনো এই গ্রন্থাগার এ জেলার জ্ঞান পিপাসু মানুষের মাঝে এখনো জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে যাচ্ছে ।
১৮৯০ খ্রিস্টাব্দে বৃহত্তর পাবনা জেলার তাঁতীবন্দের বিদ্যানুরাগী জমিদার অন্নদা গোবিন্দ চৌধুরী এটি প্রতিষ্ঠা করেন। ১৩ শতাংশ জমির ওপরে নির্মিত দুই কক্ষের সেই পুরাতন ভবন এখন আধুনিকতার ছোঁয়ায় ৪ তলা হয়েছে। বর্তমানে এই লাইব্রেরীতে প্রায় ৩০ হাজার গ্রন্থের সমাহার রয়েছে। আর এর মধ্যে প্রায় দুই থেকে তিনশ বছরের পুরাতন তালপাতার পুঁথি ও তুলোট কাগজে হাতে লেখা গ্রন্থ সংগৃহীত আছে। গ্রন্থাগারে সংগৃহীত বেশিরভাগ বই পড়া বা দেখার সুযোগ থাকলেও শতবর্ষের সংগৃহীত ঐতিহাসিক পুঁথি উন্মুক্ত করা হয় এই ভাষার মাসে। এ সময় এক সঙ্গে ১০ হাজারেরও বেশি দুস্প্রাপ্য গ্রন্থের প্রদর্শন করা হয়।
শুধু এই মাসে প্রদর্শনী চলাকালীন লাইব্রেরীর কার্যক্রম বন্ধ রেখে সব শ্রেণীপেশার মানুষের দেখার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় এই গ্রন্থাগার প্রাঙ্গণ। এব্যাপারে লাইব্রেরীর মহাসচিব আব্দুল মতিন খান বলেন, প্রতিবছর লাইব্রেরীর নিজ উদ্যোগে আমরা এই পুস্তুক প্রদর্শনী করে থাকি। এই পুস্তক প্রদর্শনীর মাধ্যমে আমরা লাইব্রেরীর দুই'শ থেকে তিনশত বছরের যে সমস্ত পুরাতন বই ও পান্ডুলিপি আছে সেগুলো তুলে ধরার চেষ্টা করি । এবং এখানে যে অনেক মূল্যবান বই আছে সেই বইগুলো বাজারে কিনতে পাওয়া যায় না। আমরা এই বইগুলো প্রদর্শনের মাধ্যমে মানুষকে বিশেষ করে
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের দেখাই যেন তারা এই বইগুলো নিয়ে পড়তে পারে। এবং নিয়মিত পাঠাভ্যাস গড়ে তুলার মাধ্যমে নিজেদের চরিত্র গঠন করতে পারে। এই বিষয়টিও বইপুস্তক প্রদর্শনীর অন্যতম উদ্দেশ্যে বলে জানান তিনি। তিনি আরও বলেন, আমরা যে বলি যুবশ্রেণী ক্ষয় হয়ে যাচ্ছে। আসলে তাদের মাঝে যদি পাঠাভ্যাস গড়ে তুলা যায়, বইয়ের প্রতি যদি ভালোবাসা ও আগ্রহ গড়ে তুলা যায় তাহলে এই পাঠকরাই আগামী দিনের দেশ ও জাতিকে গড়ে তুলবে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের ১৩৬ বছরের এই পুরাতন লাইব্রেরীকে আমরা বাংলাদেশের মধ্যে প্রাচীন ও শ্রেষ্ঠতম লাইব্রেরী হিসেবে দাবি করি। তিনি বলেন, এই দাবিটি এমনিতেই করি না। এটি প্রাচীনতম লাইব্রেরী হওয়ার অনেক যুক্তি আছে। সেইসমস্ত সম্পদগুলো আমরা দেখাতে আগ্রহী। তিনি জানান, ১৭৭৮ খ্রিস্টাব্দের আগে এই পাকভারত উপমহাদেশে কোন মুদ্রণ শিল্প ছিল না।
সেসময় কাগজ আবিষ্কার হয়নি। ১৭৭৮ সাল থেকে আমাদের এই পাক ভারত উপমহাদেশে মুদ্রণ শিল্প সৃষ্টি হয়। এরআগে মানুষ লেখাপড়া সম্পর্কে খুব বেশি জানত না। সেসময়ে মানুষ বিভিন্ন গাছের পাতার উপর লেখালেখি করতো। তিনি জানান, এরকমই অনেক তালপাতার উপর হস্তলেখা পান্ডুলিপি আমাদের এখানে আছে। তিনি বলেন, এখানে প্রায় ৯ হাজার বিভিন্ন ভাষার বালি, উড়িয়া, বাংলা, সংস্কৃতি সহ নানান ভাষার হস্তলেখা পান্ডুলিপি রয়েছে এই লাইব্রেরীতে। সেগুলো এখনো ঝকঝকে চকচকে রয়ে গেছে। সেগুলো দেখলে এখনো মনে হবে কিছুদিন আগের লেখা। তাই সেসমস্ত মূল্যবান সম্পগুলো মানুষকে দেখাতে এই পুস্তক প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়ে থাকে বলে জানান তিনি।